প্রিন্ট এর তারিখঃ Nov 21, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Jul 11, 2025 ইং
এনসিপি'র 'জুলাই যাত্রা' (জুলাই পদযাত্রা)

জুলাই মাস জুড়ে, বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) দেশব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে যার নাম 'দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা' বা 'জুলাই মার্চ টু বিল্ড দ্য নেশন'। এই কর্মসূচিটি গত বছর ঘটে যাওয়া 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান'-এর বার্ষিকী স্মরণে এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ: এনসিপি এই যাত্রার মাধ্যমে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে এবং সেই আন্দোলনের মূল দাবিগুলোকে আবার সামনে আনছে।
গণতন্ত্র ও সংস্কারের দাবি দলটি বিচার, সংস্কার এবং একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের মতো মৌলিক দাবিগুলো নিয়ে জনসাধারণের কাছে যাচ্ছে। তারা 'জুলাই ঘোষণা' এবং 'জুলাই চার্টার' প্রকাশের উপর জোর দিচ্ছে, যা তাদের মতে জনগণের ঐক্য ও সংস্কারের অঙ্গীকার।
দেশব্যাপী জনসম্পর্ক স্থাপন এনসিপি দেশের ৬৪টি জেলাতেই এই পদযাত্রা পরিচালনা করছে, যার মাধ্যমে তারা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করছে এবং তাদের দাবিগুলোর প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি দলটি দীর্ঘদিন ধরে জনসম্পর্ক স্থাপনে পিছিয়ে ছিল। এই পদযাত্রা তাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে এবং আসন্ন নির্বাচনের আগে জনসমর্থন বাড়াতে সাহায্য করছে।
দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ এনসিপি দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা: জুলাই মাসের শুরুতে শহীদ আবু সাঈদের গ্রামের বাড়ি পিরগঞ্জের বাবুনপুরে তাঁর কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই পদযাত্রার সূচনা হয়। আবু সাঈদ গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন এবং জনগণের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
'জুলাই চার্টার' ও 'জুলাই ঘোষণা' উন্মোচন এনসিপি ঘোষণা করেছে যে, ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'জুলাই চার্টার' এবং 'জুলাই ঘোষণা' আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হবে। তারা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, যদি সরকার ৩ আগস্টের মধ্যে 'জুলাই ঘোষণা' ও 'জুলাই চার্টার' প্রকাশ না করে, তবে তারা আবারও রাজপথে আন্দোলনে নামবে।
আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ এনসিপি দেশের অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং উৎপাদনের সুষম বন্টনের কথা বলছে।
এনসিপি নিজেদেরকে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরছে, যারা প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের নাগরিক-কেন্দ্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দেশ পুনর্গঠনের উপর জোর দিচ্ছে।
যদিও এনসিপি তাদের 'জুলাই যাত্রা'কে সফল করতে সচেষ্ট, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কিছু সমালোচক বলছেন যে, দলটি জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারেনি এবং এই পদযাত্রা দেরিতে শুরু হয়েছে। এছাড়াও, রাজনৈতিক বিভাজন এবং অন্যান্য দলগুলির মধ্যে জোটবদ্ধতা এনসিপি'র জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
এই 'জুলাই যাত্রা' এনসিপি'র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা কতটা জনসমর্থন আদায় করতে পারে এবং তাদের দাবিগুলো সরকারকে মানতে বাধ্য করতে পারে, তার উপরই তাদের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করবে। আসন্ন নির্বাচন এবং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই যাত্রা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ জুলাই ৩৬ নিউজ