
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
রিপোর্ট: জুলাই৩৬ নিউজ ইনভেস্টিগেশন ডেস্ক,
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নামী নেতা সৈকত পন্ডিত—যিনি বর্তমানে সংগঠনটির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বে রয়েছেন—তার প্রভাব শুধু রাজপথেই সীমাবদ্ধ নয়, বিস্তৃত হয়েছে অর্থ উপার্জনের নানা অদৃশ্য রুটে। সবচেয়ে আলোচিত তার পরিবারিক রাজনৈতিক বিপরীততা। সৈকতের বাবা হলেন ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই দ্বৈত রাজনীতি এখন ব্যবহার হচ্ছে গোপন চাঁদাবাজির ছায়াতলে।
চাঁদাবাজির কেন্দ্রবিন্দু: যাত্রাবাড়ি ও সায়েদাবাদ
তথ্য অনুসারে, সৈকত পন্ডিত ও নয়নের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক প্রভাবশালী চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। যাত্রাবাড়ি ও সায়েদাবাদে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা ওঠানো হয় পরিবহন খাত, কাঁচাবাজার এবং আড়ত ঘিরে।
🔹 পরিবহন খাত
যাত্রাবাড়ি ও সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি বাস, মিনি ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান থেকে দৈনিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করা হয়। পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, 'টোকেন' না কাটলে গাড়ি ছাড়তে দেয়া হয় না।
🔹 ময়লার ব্যবসা: লুকানো সোনা
শহরের প্রতিদিনের বর্জ্য নিয়েও চলছে মুনাফার খেলা। স্থানীয় সূত্র জানায়, সৈকতের লোকজন যাত্রাবাড়ির বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা সংগ্রহ ও অপসারণ নিয়ন্ত্রণ করে। ‘ময়লার গাড়ি চলাচলের নামে’ মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে সিটি করপোরেশনের আড়ালে।
🔹 ছাগলের আড়তের অঘোষিত রাজত্ব
যাত্রাবাড়ি আড়তে প্রতিদিন শত শত ছাগল কেনাবেচা হয়। সৈকত-নয়নের অনুসারীরা এই ছাগলের হাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। প্রত্যেক ছাগলের পিছনে নির্দিষ্ট হারে ‘পার্টি ট্যাক্স’ বসানো হয়েছে। বিক্রেতারা বাধ্য হয়ে এই অতিরিক্ত অর্থ গুনছেন, কারণ অভিযোগ করলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি আসে।
নয়নের জ্যান্ডার: শক্ত হাতে সিন্ডিকেট পরিচালনা
রবিউল ইসলাম নয়ন আড়াল থেকে এই সিন্ডিকেটের বড় অংশ পরিচালনার দায়িত্ব তার উপর। সূত্র জানায়, নয়নের ‘জ্যান্ডার’ নামে পরিচিত বাহিনী এই চাঁদাবাজি কার্যক্রমে মাঠ পর্যায়ের তদারকি করে। এই বাহিনীর সদস্যদের রয়েছে অস্ত্র, প্রভাব এবং স্থানীয় পুলিশের সাথে আঁতাতের অভিযোগ।
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও প্রশাসনিক নীরবতা
বিএনপি, আওয়ামী লীগ—উভয় রাজনৈতিক দলের পরিবারিক সম্পর্ক ব্যবহার করে সৈকত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিচ্ছেন দীর্ঘদিন। কখনো আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে হিসেবে, আবার কখনো বিরোধী দলের নেতা পরিচয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের অনেকেই এসব বিষয় জানলেও মুখ খোলেন না।
যাত্রাবাড়ির নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র
রাজনীতির নামে যুবদলের একাংশ এখন চাঁদাবাজির একচ্ছত্র কারখানায় পরিণত হয়েছে। সৈকত-নয়নের সিন্ডিকেট শুধু অর্থ নয়, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখেছে। এই চক্র ভাঙা না গেলে রাজনীতি নয়, শুধুই অপশক্তির বিজয় ঘটবে।