নিজস্ব বিশ্লেষণ | জুলাই ১৬, ২০২৫
স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক সমালোচনার জায়গাটিকে বরাবরই রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না—এই সত্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু যখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে এসেছে, তারাই যখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে একরকম দমন-পীড়নমূলক আচরণ করে, তখন সেটি শুধু উদ্বেগজনকই নয়—বরং আত্মঘাতীও।
সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রণালয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) ‘জনতার সামনে’ অনুষ্ঠানের একটি স্যাটায়ার সেগমেন্ট ঘিরে দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত করেছে এবং আরও দুইজনকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। অভিযোগ: মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত এসেছে তথ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সরাসরি নির্দেশে—যা ইতোমধ্যে একধরনের রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
যে স্যাটায়ারটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি সম্প্রচার হয় গত ২৭ জুন। সেটিতে ২২ মে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের হুমকি এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার নাটকীয়তা নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপন ছিল। কোথাও কোনো অশালীনতা বা ব্যক্তিগত আক্রমণ ছিল না।
বরং, এটি ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের অভ্যন্তরীণ নাটকীয়তা নিয়ে জনসচেতনতার একটি চেষ্টামাত্র। তাহলে এতটা প্রতিক্রিয়া কেন? সেই উত্তর মেলে একটাই: ক্ষমতা এখন প্রশ্ন শুনতে চায় না, ব্যঙ্গ তো দূরের কথা।
এই ধরনের প্রতিক্রিয়া শেখ হাসিনার আমলে স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। তখন সংবাদপত্র বন্ধ, সাংবাদিক গ্রেপ্তার, টকশো বন্ধ হওয়া ছিল রোজকার ঘটনা। কিন্তু যাঁরা সেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মুখ, তারাই যদি এখন ভিন্নমত দমনে পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করেন—তবে সেটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত দেয়।
মাহফুজ আলমদের দাবি ছিল, “বাংলাদেশের মিডিয়া সংস্কার করা হবে”। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—সংস্কার মানেই কি শৃঙ্খল?
ইতিহাস বলে—অনেক বিপ্লবীরাই একসময় তাদেরই বিরুদ্ধ শক্তির আচরণ ধারণ করেন। ফ্রান্স, রাশিয়া, এমনকি উপমহাদেশের অনেক উদাহরণ আছে। কেউ একসময় যারা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রাস্তায় ছিলেন, পরে তারাই হয়ে যান সেই শক্তির মুখপাত্র।
এটা শুধুই মানবিক দুর্বলতা, নাকি ক্ষমতার কাঠামোই মানুষকে বদলে ফেলে?
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদেরকে এখনো একটি বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে এমন অস্থিরতা তাদের অবস্থানকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
একটি রাষ্ট্র সৎ, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক কিনা—তা বোঝা যায়, সে কেমন ব্যঙ্গ বা সমালোচনা সহ্য করতে পারে তা দেখে।
সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে।
জুলাই ৩৬ নিউজ