জুলাই৩৬ নিউজ বিশেষ প্রতিবেদন
লিখেছেন: প্রতিবেদক দল
মধ্য জুলাই থেকে সারাদেশ যখন উত্তাল ছাত্র-জনতার মিছিলে, তখন নীরব দর্শক হয়ে থাকেননি শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মীসহ নানা পেশার মানুষ। ছাত্রদের পক্ষে কণ্ঠ তুলে ধরে তারা একদিক থেকে গণঅভ্যুত্থানের নেপথ্য সহযোদ্ধায় পরিণত হন। কিন্তু এই অবস্থান ছিলো না মোটেও সহজ। সরকারের প্রলোভন, হুমকি, এমনকি সামাজিক বিদ্বেষ—সবকিছু উপেক্ষা করে তারা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তা ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য।
দুই মেরুতে বিভক্ত শিল্পী সমাজ
আগস্টের প্রথম দিন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রাণহানি সংখ্যা যখন হাজার ছুঁই ছুঁই, ঠিক তখন বিটিভি ভবনের সামনে কয়েকজন তারকার “শোক মানববন্ধন” অনুষ্ঠিত হয়। তবে তাদের শোকের বিষয়বস্তু ছিলো বিস্ময়কর—ছাত্রদের প্রাণহানি নয়, বরং বিটিভি ভবনের পোড়া গেট!
একই সময়, রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থান নেন শিল্পী সমাজের আরেক অংশ—ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে।
আজমেরী হক বাঁধন বলেন:
“ওই শিশুদের মাঝে আমার সন্তান থাকতে পারতো। ওই মানুষগুলোর মাঝে আমি, আপনি—আমরা সবাই থাকতে পারতাম।”
তিনি জানান,
“হেলিকপ্টার থেকে যখন রিয়া গোপ-কে শ্যুট করা হলো, আর কিছুদিন পর যখন সে মারা গেলো, তখন আমার মনে হলো আমার কিছু একটা করা উচিত।”
শিক্ষকেরা: শামসুজ্জোহার উত্তরসূরি হয়ে রাস্তায়
১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুজ্জোহা যেভাবে ছাত্রদের জন্য জীবন দিয়েছিলেন, ঠিক তার প্রতিবিম্ব দেখা যায় ২০২৪-এর জুলাইয়েও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন:
“আমরা সবসময় ভেবেছি, এখন না বললে ওরা আরও খারাপ করবে। তখন ভয় লাগেনি, মনে হয়েছিল সামনে যেতে হবে।”
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন:
“যখন দেখি ছাত্ররা অকাতরে জীবন দিচ্ছে, তখন ঘরে বসে থাকা মানেই অন্যায়। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে রাস্তায় নেমেছি।”
আইনজীবীরা: আদালতই হয়ে উঠলো প্রতিবাদের মঞ্চ
২৯ জুলাই, ছাত্র-জনতার উপর যখন নির্বিচারে গুলি চলছিল, তখন মাত্র আধা ঘণ্টায় রিট ড্রাফট করে আদালতে দাখিল করেন কিছু তরুণ আইনজীবী। রিটে উল্লেখ ছিল:
ছাত্রদের ওপর গুলি বন্ধের আবেদন।ডিবি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়কের মুক্তির দাবি।
মানজুর আল মতিন, আইনজীবী ও সাংবাদিক, বলেন:
“বাঁচা-মরাটা তখন বড় বিষয় ছিল না। ঘরে বসে থাকা তখন আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প মনে হয়নি।”
বিশ্লেষণ | জুলাই৩৬ নিউজ মন্তব্য
যারা শ্রেণিকক্ষে শেখান, যারা আদালতে ন্যায়ের পক্ষে লড়েন, কিংবা যাদের হাতে থাকে সংস্কৃতির শক্তি—তারা কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি। ছাত্রদের রক্ত যখন রাজপথ রঞ্জিত করছিল, তখন তারা নৈতিক দায়িত্বে নেমে এসেছিলেন প্রতিবাদে।
তাদের অনেকেই হারিয়েছেন চাকরি, সম্মান, পাবেন না রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি। তবুও পেছনে ফিরে তাকিয়ে তারা বলেন—
“ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো ছিলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।”
জুলাই৩৬ নিউজ | শোককে শক্তিতে, সাহসকে ইতিহাসে
জুলাই ৩৬ নিউজ