বিশেষ প্রতিবেদন | ফিরে দেখা গণঅভ্যুত্থান
চার দিন আগেই পূর্ণ হলো বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের বছরপূর্তি—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) অঞ্চলের গুলি, গণপ্রতিরোধ ও ছাত্রনির্যাতনের সেই ভয়াল দিনগুলো, যা চলেছিল ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
এই সময়কাল ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, এবং দেশের প্রথম ছাত্রলীগমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের ঘটনাবহুল অধ্যায় হিসেবে।
১৫ জুলাই শুরু হয় টানা দমন-পীড়ন। ক্যাম্পাস পুনর্দখলের লক্ষ্যে পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানে নামে ছাত্রলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী কর্মীরা। জাবির শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করলেও তাদের লক্ষ্য করে চালানো হয় টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং সরাসরি গুলি।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, আশপাশের গ্রামবাসী, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যন্ত যুক্ত হন প্রতিরোধে।
১৮ জুলাই—সেই ভয়াবহ দিনটি আজও ভুলতে পারেনি কেউ। গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে পুলিশি সাঁজোয়া যান (এপিসি) থেকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। তার নিথর দেহ পড়ে ছিল ক্যাম্পাস গেটের সামনে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই দৃশ্য ভাইরাল হলে সারা দেশজুড়ে নেমে আসে শোক আর ক্ষোভ।
এ অঞ্চলের আরেক ভয়াবহ স্মৃতি—আশুলিয়ায় পোড়ানো হয় আন্দোলনকারীদের একাধিক মরদেহ। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম নিষ্ঠুর ও অমানবিক ঘটনা, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।
প্রতিরোধ এতটাই সুসংহত ছিল যে, পুরো জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ ও সরকারি বাহিনী মুক্ত ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। এই নজির দেশব্যাপী ছাত্র রাজনীতিতে নতুন আলো জ্বালায়।
যদিও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমেই দেশ ফিরে পায় একটি নির্বাচনকালীন সরকার ও গণতান্ত্রিক সুযোগ, তবে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের অনেকেই এখন অনৈক্যের সুর দেখছেন। নেতৃত্ব, অংশগ্রহণ, পুরস্কার বণ্টন—সব কিছু নিয়েই প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল।
জাহাঙ্গীরনগরের প্রতিরোধ ছিল রক্তের, সাহসের এবং ত্যাগের উপাখ্যান। ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট—এই সময়কাল শুধু ক্যাম্পাস নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রপথেরও একটি টার্নিং পয়েন্ট। এখন প্রশ্ন একটাই—যারা সেই প্রতিরোধ গড়েছিলেন, তারা কি ইতিহাসে জায়গা পাচ্ছেন নাকি হারিয়ে যাচ্ছেন রাজনীতির নতুন সমীকরণে?
জুলাই ৩৬ নিউজ