ঢাকা | বঙ্গাব্দ

আমার নাতির কোনো দোষ ছিল না”—গোপালগঞ্জ হামলায় নিহত রমজানের পরিবারে শোকের মাতম

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 18, 2025 ইং
রমজানের মা মর্জিনা বেগম পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তার মা, রমজানের দাদী রেহানা বেগম। ছবির ক্যাপশন: রমজানের মা মর্জিনা বেগম পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তার মা, রমজানের দাদী রেহানা বেগম।
ad728

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি |

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস হামলায় এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৯ জন, আর আহতের সংখ্যা শতাধিক। নিহতদের একজন ছিলেন রমজান কাজী—একজন সাধারণ দিনমজুর, যিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

আজ (বৃহস্পতিবার) নিহত রমজানের কোটালীপাড়া উপজেলার হরিনাহাটি গ্রামের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি জুড়ে শোকের স্তব্ধতা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন রমজানের মা মর্জিনা বেগম। পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তার মা, রমজানের দাদী রেহানা বেগম।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার নাতি কোনো রাজনীতির সঙ্গে ছিল না। সে শুধু সংসার চালাত। তারই টাকায় আমাদের ভাত জুটতো। এখন আমরা কীভাবে বাঁচব? আমি আমার নিরীহ নাতির হত্যার বিচার চাই।”

রমজানের মামা কলিম মুন্সি জানান, রমজান রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তার বাবা কামরুল কাজী একজন প্রতিবন্ধী, দিনে একবেলা ভ্যান চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতেন। কলিম বলেন, “রমজান তো কারো ক্ষতি করেনি। তার কী অপরাধ ছিল যে গুলি করে হত্যা করা হলো?”

নেই ময়নাতদন্ত, নেই বিচারপ্রক্রিয়া

ঘটনার দিন রমজানকে আহত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কলিম মুন্সি বলেন,
“হাসপাতাল থেকে তাকে আর বাঁচানো গেল না। পরে আমরা থানায় গেলে গেট বন্ধ পাই। এরপর আবার লাশ নিয়ে হাসপাতালে ফিরি। তখন হাসপাতালের লোকেরা বলেন, ‘এখানে সমস্যা হতে পারে, আপনারা লাশ বাড়ি নিয়ে যান।’ ফলে আমরা ময়নাতদন্তও করাতে পারিনি।”

রমজানের মা বলেন, “আমার ছেলেকে যারা গুলি করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। সে যদি দোষী হতো, তাহলে বলতাম। কিন্তু সে ছিল নিরীহ, শুধু কাজ করতো।”

একটি প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যু, এক ধ্বংসপ্রাপ্ত পরিবার

রমজান কাজী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে পরিবার পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। ২০ বছর আগে পরিবারটি গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক এলাকায় এসে বসতি গড়ে। দিনমজুরি করেই চলত তাদের সংসার।

এখন প্রশ্ন উঠছে, একজন নিরীহ নাগরিক কীভাবে রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হলেন? কেন তাকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হলো? কেন ময়নাতদন্ত হয়নি?


নিউজটি আপডেট করেছেন : জুলাই ৩৬ নিউজ

কমেন্ট বক্স