জুলাই৩৬ নিউজ ফিচার রিপোর্ট। চট্টগ্রাম | ২১ জুলাই ২০২৫
আট বছর বয়সী ফারিহা অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে
“আম্মু, সবাই আবু সাইদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ'র কথা বলে, কিন্তু আমার বাবার কথা কেউ বলে না কেন?”
ফারিহার বাবা শহীদ ফারুক—একজন সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী।
কিন্তু এই ‘সাধারণ’ মানুষটিই ১৬ জুলাইয়ের প্রতিরোধের দিনে হয়ে উঠেছিলেন চট্টগ্রামের এক নীরব বীর।
ফারুক ছিলেন ষোলশহরের একটি ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী। তার ছোট্ট সংসার লালখান বাজারের এক কলোনিতে—স্ত্রী সীমা আক্তার, ছোট্ট মেয়ে ফারিহা ও এক ছেলে নিয়ে গড়ে তোলা ছিল তাদের জীবন।
প্রতিদিনের মতোই ১৬ জুলাই দুপুরে ‘বিসমিল্লাহ হোটেল’-এ খেয়ে, হাত মুছতে মুছতে বের হচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই আচমকা গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন।
হয়তো তখনও হাতটা পুরোপুরি মুছা শেষ হয়নি...
তার শরীরে সেদিন কোনো ‘গৌরবের পোশাক’ ছিল না—ছিল শুধু ঘামে ভেজা ফার্নিচার মিস্ত্রির পরনের পোশাক।
তার স্ত্রী সীমা আক্তার দুঃখ করে বলেন,
“আমার স্বামী ছাত্র ছিল না, বড় নেতা ছিল না, তাই কেউ তার নাম বলে না। তিনি শুধু একজন শ্রমিক ছিলেন, ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন।”
এই সমাজে যেন সাহসিকতার কদর শুধু তখনই হয়, যখন তা আসে শিক্ষিত বা প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যাক্তির হাত ধরে।
কিন্তু শহীদ ফারুক ছিলেন সেই নীরব কণ্ঠ—যার রক্তেও প্রতিরোধের ইতিহাস লেখা হয়।
এক অনুচ্চারিত নাম, এক অনস্বীকার্য ত্যাগ কেন ফারুকের নাম আমাদের ব্যানারে নেই?
কেন তাকে স্মরণ করা হয় না রাষ্ট্রীয় বক্তব্যে, টিভির হেডলাইনে বা পোস্টারে?
এই প্রশ্ন শুধু সীমা আক্তারের না, এই প্রশ্ন রেখে গেছে ছোট্ট ফারিহাও।
“আমার বাবার কথা কেউ বলে না কেন?”—এই প্রশ্নে লুকিয়ে আছে আমাদের ইতিহাস চর্চার এক অসঙ্গতি।
ফারুক একজন ছিলেন, যার রক্তে লেখা হয়েছে ১৬ জুলাইয়ের প্রতিরোধ। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, প্রতিরোধ কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণি বা পরিচয়ের নয়—তা মানুষের।
জুলাই৩৬ নিউজ প্রতিজ্ঞা করে—আমরা শহীদ ফারুকের মতো ‘নামহীন’ শহীদদের নাম ভুলে যাব না। তাদের গল্প আমরা বলে যাব।
কারণ ইতিহাস কেবল বীরদের কথা বলে না—সে বলে অবহেলিত বীরদের কথাও।
জুলাই ৩৬ নিউজ